নেবুলাইজার কি?
নেবুলাইজার একটি ওষুধ সরবরাহকারী যন্ত্র যা ফুসফুসে শ্বাস নেওয়া কুয়াশার আকারে ওষুধ পরিচালনা করতে ব্যবহৃত হয়। নেবুলাইজারগুলি সাধারণত হাঁপানি, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, সিওপিডি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগ বা ব্যাধিগুলির চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়।তরল ওষুধকে অত্যন্ত সূক্ষ্ম মেঘের মতো কণাতে কমাতে ব্যবহৃত একটি ডিভাইস; শ্বাস নালীর গভীর অংশে ওষুধ সরবরাহ করতে কার্যকর।
# শ্বাসনালিজনিত রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে, রোগী ইনহেলার নিতে ব্যর্থ হলে নেবুলাইজার দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
এক জন রুগীকে যে ভাবে নেবুলাইজার দেওয়া হয়ঃ
► রোগীকে আরামদায়কভাবে আধাশোয়া বা বসা অবস্থায় রাখুন।
►নেবুলাইজারের অংশগুলো জোড়া দিন। প্রতি স্প্রেতে ২৩ মিলি পানি, সঙ্গে ৫-১ মিলি সালবিউটামল সল্যুশন এবং প্রয়োজনে ইপ্রাট্রোসিয়াম সল্যুশন (৫ মিলি) নিন।
►এবার কমপ্রেসারটিকে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে সুইচ অন করুন। এতে বাতাস দ্রুত বেগে প্রবাহিত হয়।
►এবার ওষুধের অ্যারোসল মাউথপিস (টিপিস) বা মাস্ক দিয়ে মুখে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে নিতে থাকুন। মাউথপিস ব্যবহার করলে রোগীকে দাঁতের ফাঁকে রেখে ঠোঁট বন্ধ করে রাখতে হবে।
►নেবুলাইজ করার সময় রোগীকে লম্বা শ্বাস নিতে দিন ধীরে ধীরে।
► সাধারণত ৩-৬ মিলি তরল ওষুধ ৫-১০ মিনিটে নেবুলাইজ করা হয়।
নেবুলাইজার কখন ব্যবহার করবেন?
নেবুলাইজার দিয়ে তরল ওষুধকে সংকুচিত করে বায়ু বা অক্সিজেন দিয়ে স্প্রে বা অ্যারোসলে রূপান্তরিত করা হয়, যা খুব সহজেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের শ্বাসনালী ও অ্যালভিউলিতে ঢুকে শ্বাসকষ্ট দূর করে। ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।অনেকেই প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নেবুলাইজার দেন। আবার কেউ কেউ বাসাতেই নিয়ে আসেন নেবুলাইজার মেশিন। তিন ধরনের নেবুলাইজার পাওয়া যায়। জেট, আলট্রাসাউন্ড ও মেশ বা জালের মতো নেবুলাইজার। এদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতির বলে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় জেট নেবুলাইজার। অ্যাজমা, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য শ্বাসনালীজনিত রোগের তীব্রতা বাড়লে নেবুলাইজার দেয়ার প্রয়োজন হয়। এর কয়েকটি অংশের মধ্যে তরল ওষুধ প্লাস্টিকের টিউবের মাধ্যমে স্প্রে করে দেহে প্রবেশ করানো হয়।
একবার ব্যবহারের যে ভাবে নেবুলাইজার পরিষ্কার করা উচিত—
সাধারণত হাসপাতালেই নেবুলাইজার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। বাড়িতেও কিনে তা ব্যবহার করতে পারেন।সেক্ষেত্রে নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি।
►ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
►নেবুলাইজারের কমপ্রেসার, টিউব, মাউথপিস বা মাস্ক ও নেবুলাইজার আলাদা করে ফেলুন।
►মাউথপিস বা মাস্ক ও নেবুলাইজার গরম পানিতে ৩০ সেকেন্ড রেখে ধুয়ে নিন। এরপর বাতাসে এগুলো শুকিয়ে নিন।
►কমপ্রেসার, টিউব সাধারণত গরম পানি দিয়ে ধোয়া যায় না। টিউবের বাইরের দিকটা কেবল পরিষ্কার করা যায়।
►মাউথপিস বা মাস্ক ছয় মাস পরপর পাল্টান।
►এর ফিল্টারটি নিয়মিত পাল্টান বা ফিল্টারে ময়লা দেখা গেলেই তা পাল্টে ফেলুন।
নেবুলাইজারের কাজ কী?
ছোট শিশু এবং বৃদ্ধ যারা সরাসরি ইনহেলার টানতে পারে না বা কোনো কারণে মেডিসিন নিতে পারছে না, তাদের গ্যাসের মাধ্যমে নেবুলাইজার দেওয়া হয়। নেবুলাইজার যে যে কাজ করে থাকে।
১) রেসপাইরেটরি ইনফ্লামেশন হ্রাস করে।
২) ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পরিমিত ডোজের ওষুধ গ্রহণ করা যায়।
৩) ব্রঙ্কিয়ালে অস্বাভাবিক স্ফীতি কমায়।
৪) শ্বাসনালীর সংক্রমণকে দ্রুত সারিয়ে তোলে।
অ্যাজমা বা ফুসফুসের যেকোনো সমস্যায় নেবুলাইজারের কোনো বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে ইনহেলারের থেকে সহজে এবং আরও ভালোভাবে সরাসরি ওষুধ প্রয়োগ করা যায়।
নেবুলাইজার ব্যবহারে উপকারিতাঃ
এটি ওষুধ প্রয়োগ করার একটি মেশিন। খাওয়ার বদলে শুধু সরাসরি ওষুধের মিশ্রণকে বাষ্পাকারে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ব্যবহার করতে হয়। এই যন্ত্রটি দিয়ে লিকুইড মেডিসিনকে সংকুচিত করে বায়ু বা অক্সিজেন দিয়ে স্প্রে বা অ্যারোসলে রূপান্তরিত করা হয়। তাই এই বাষ্পটি খুব সহজে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসকষ্ট দূর করে। আর নেবুলাইজার দিয়ে শ্বাসকষ্ট দূর করার চিকিৎসাটি নেবুলাইজ নামে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের নেবুলাইজার আছে। কিন্তু আজকাল আল্ট্রাসনিক মেশিন মেকানিজম বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ এটা ব্যবহার করা সহজ ও সুবিধাজনক।
নেবুলাইজার ব্যবহারে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়?
►নেবুলাইজ করার শুরুতে অনেক সময় রোগীর শ্বাসনালী তাৎক্ষণিকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ে। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়।
►ধূমপানকারীদের জন্য নেবুলাইজার ব্যবহার করার সময় রোগীর শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
►অনেক ক্ষেত্রে নেবুলাইজারে ইপ্রাট্রোসিয়াম সলিউশন (নাক ও শ্বাসযন্ত্রের ইন্দ্রীয় বন্ধ করে দেয় এমন ওষুধ) ব্যবহার করা হয়। রোগী যদি গু্লকোমা রোগে আক্রান্ত হয়, তবে রোগীর চোখে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
►রোগীর হরমনজনিত সমস্যা থাকলে নেবুলাইজ করার সময় ফেসমাস্ক ব্যবহার এড়ানো উচিত, কারণ এর ফলে মুখের ত্বক এবং চোখে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
►বয়স্ক পুরুষ রোগীদের ক্ষেত্রে নেবুলাইজারে ইপ্রাট্রোসিয়াম সলিউশন ব্যবহারের ফলে রোগীর অণ্ডকোষের সমস্যা বেড়ে যায়।
►নেবুলাইজার দীর্ঘমেয়াদি কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি নয়। সাময়িক সময়ের জন্য রোগীর শ্বাসকষ্ট কমাতে এটি ব্যবহার করা হয়। তাই অ্যাজমা ও সিওপিডি-রোগীদের নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত নয়।
►অনেক সময় নেবুলাইজারে ব্যবহৃত ওষুধ রোগীর শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
►নেবুলাইজার মেশিনটি সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হলে ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে রোগী বিভিন্ন ব্যাকটিরিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে
নেবুলাইজার দামঃ
নেবুলাইজার বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে এর মদ্ধে কিছু নেবুলাইজার এর দাম নিন্মে দেওয়া হলোঃ